প্রসঙ্গ:প্রিয় রেহনুমা ম্যাডাম এবং স্কয়ার হাসপাতালের গাইনী ডিপার্টমেন্ট
স্কয়ার হাসপাতালে বিতর্কিত মৃত্যু হওয়া এক নবজাতকের লাশের সাথে তার মায়ের হৃদয় বিদারক ভাইরাল ভিডিওটা দেখে চোখের পানি আটকে রাখতে পারি নি আর। সত্যি সহ্য করা যায় না এমন কষ্টের ব্যপার। জানি না মা টা কিভাবে সহ্য করছেন। আল্লাহ বাচ্চাটার বাবা মা কে ধৈর্য দান করুক।
ভিডিও টির পাশাপাশি আর একটা ভাইরাল ভিডিও যা প্রচন্ড মন খারাপ করিয়ে দিলো তা হলো মৃত নবজাতকের আত্মীয় স্বজনের ডাক্তার রেহনুমা ম্যাডাম কে মারাত্মক ভাবে মৌখিক আক্রমণ করতে দেখে। ভিডিও তে দেখলাম, তারা যতভাবে সম্ভব রেহনুমা ম্যাডাম কে অপমান করার চেষ্টা করেছেন। আজেবাজে যা মুখে এসেছে বলেছেন। মেনে নিলাম শোকে বিহ্বল হয়েই তারা এমন করেছেন। কিন্তু তারপর ও রেহনুমা ম্যাডামের মতো একজন অসাধারণ, ভালো মানুষ কে এমন ধরনের অভিযোগ কখনো শুনতে হবে অথবা এই ধরনের অপমান সহ্য করতে হবে এটা আমি সত্যি মেনে নিতে পারছি না।
ঘটনা যতদূর শুনেছি বা শিশুটির আত্মীয় স্বজনদের পোস্ট থেকে যতদূর জেনেছি, তাতে তাদের অভিযোগের বেশ কিছু অসংলগ্নতা চোখে পড়লো। আমার মতো non medical person এর কাছে যদি অসংলগ্নতা গুলো ধরা পরে তাহলে মেডিকেল পার্সন রা আরো ভালো ধরতে পারবেন ব্যপারগুলো। আমি নিশ্চিত তদন্ত করলে অবশ্যই সত্য ঘটনা টা বের হয়ে আসবে। এবং সেটা অবশ্যই বের হওয়া উচিত। রেহনুমা ম্যাডামের মতো একজন অসাধারণ মানুষ, এমন কলংকময় অভিযোগের বোঝা কয়েক দিনের জন্য কিছু মানুষের সামনে বহন করবেন সেটা চিন্তা করলেই আমার কেমন জানি দমবন্ধ লাগছে।
স্কয়ারে হাসপাতাল এবং রেহনুমা ম্যাডামের সাথে আমার পরিচয় প্রায় ৪ বছরের। এই চার বছর কে আমার জীবনের কঠিনতম ৪ বছর বলা যায়।২০১৪ সালে আমার ইনফার্টিলিটি ট্রিটমেন্ট শুরু হয় । সে বছরই প্রথমবারের মতো আমি জানতে পারি যে আমার মা হওয়ার চান্স বেশ কম। কিছুটা চান্স থাকতেই তাই রেহনুমা ম্যাডাম আমার আই ভি এফ ট্রিটমেন্ট করার ( টেস্ট টিউব বেবি ট্রিটমেন্ট) সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন । এরপর দেশের বাইরে ও গিয়েছি আমি। সবাই বলেছেন এছাড়া আমার আর কোন ট্রিটমেন্ট তো নাই ই, বরং তা করার পর ও কন্সিভ করার চান্স ১০–১৫%। যা প্রায় নাই এর কাছাকাছি। সেসব দিনের কথা আমি সত্যি আর মনে করতে পছন্দ করি না, তা ও আজ না লিখে পারলাম না।
আই ভি এফ এর ট্রিটমেন্ট সম্পর্কে যাদের ধারণা নেই তাদের জন্য বলছি, এটা একটা দীর্ঘমেয়াদি, শারীরিক এবং মানসিক কষ্টের সমন্বয় যুক্ত চিকিৎসা। এর কষ্ট এবং যন্ত্রণাগুলো ভাষায় প্রকাশ করার আমি চেষ্টা করতে পারি কিন্তু মনে হয় ঠিক মতো বোঝাতে পারবো না। তা ও আমি পরে কখনো সে ব্যপারে লিখবো। যাই হোক এই চিকিৎসার সময় কম বেশি মাথা নষ্ট থাকে প্রায় সব রোগীর। তাই ডাক্তারের সহমর্মিতা এবং কাউন্সিলিং এই সময় খুব জরুরি দরকার । কিন্তু দু:খজনক হলে ও সত্য যে বাংলাদেশের বেশিরভাগ ইনফার্টিলিটি ডাক্তার রাই সেই সহমর্মিতা দেখানো তো দূর বরং উলটো এমন বাজে ব্যবহার করেন যে রোগীর জন্য চিকিৎসা আরো কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু রেহনুমা ম্যাডাম তার ইনফার্টিলিটি পেশেন্টদের ব্যপারে খুুবই যত্নশীল। ম্যাডামের কাছে আমি যখন চিকিৎসা শুরু করি আমি তার কোন পূর্বপরিচিত ছিলাম না তারপর ও আমার ছোটখাটো যে কোন কাজে যখন দরকার হয়েছে ম্যাডাম কে ফোন করলেই উনি রিসিভ করেছেন। কখনো কল রিসিভ করতে না পারলে উনি কল ব্যাক করেছেন অথবা টেক্সট করে বলেছেন প্রয়োজন জানিয়ে উনাকে ম্যাসেজ করতে। ম্যাসেজ করে কিছু জানতে চাইলে ও উনি রিপ্লাই করতেন অতি অবশ্যই। রেহনুমা ম্যাডামের প্রতি টা পেশেন্টের সাথেই মনে হয় এই জায়গাটা তে এসে আমার গল্পটা মিলে যাবে।
গত তিন– চার বছর ধরে ম্যাডামের চেম্বারের ওয়েটিং রুমে বসার সুবাদে তার প্রচুর রোগীর সাথে কথা বলার সুযোগ হয়েছে। এবং সেখানে মজার ব্যপার যেটা লক্ষ করেছি, তা হলো উনার প্রতি টা রোগীর ই মনে হয় যে ম্যাডাম তাকে আলাদাভাবে আদর করেন। কারণ যে কোন বিপদে তাদের ফোন ধরেন। না ধরতে পারলে কল ব্যাক করেন অথবা টেক্সট করেন। একথা শোনার আগে আমি ও ভাবতাম আমি স্পেশাল পেশেন্ট ম্যাডামের। পরে সবার কথা শুনে বুঝেছিলাম ম্যাডামের কাছে তার প্রতি টা পেশেন্ট ই স্পেশাল।
আমি জানি না বাংলাদেশে এমন অমায়িক ব্যবহারের, দরদী ডাক্তার আর কতজন রয়েছেন। আমি এটা ও জানি না রোগীর ফোন কলের রিপ্লাই করেন , প্রয়োজনে ফোনে ওষুধ বলে দেন এমন ডাক্তার ই বা কয়জন আছেন এদেশে !!! আমার দেখা উনি একজন ই। আপনার চেনা কেউ রয়েছেন কি?? ডাক্তারের আত্মীয়, বন্ধু হলে আলাদা কথা। কিন্তু অনাত্মীয় রোগীর জন্য এতখানি সময় দেয়া এবং আন্তরিকতা দেখানো ডাক্তার আমাদের দেশে খুব কম ই আছেন।
স্কয়ার হাসপাতালে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে আমি এবার কিছু কথা সবার উদ্দেশ্যে লিখতে চাই। আমার লেখা পড়ার পর ব্যপার টা তদন্ত হওয়ার আগে রেহনুমা ম্যাডাম কে নিয়ে বাজে কথা বলা ঠিক হবে কিনা সেটার বিচার বিবেচনা আপনাদের হাতে ছেড়ে দিলাম।
ঘটনা ১:
আমার ইনফার্টিলিটি ট্রিটমেন্ট এর সময় প্রথম বারের আই ভি এফ ব্যর্থ হয়। খুব আশা করে ছিলাম তাই আশা ভংগের কষ্টে ভিতরে ভিতরে প্রচণ্ড ভেংগে পড়েছিলাম সে সময়।ঠিক সেসময় ই আমার হাজবেন্ড একটা ভয়ংকর যুদ্ধের জায়গাতে মিশনে চলে যায়। তার মিশনে যাওয়ার পরদিন ই আমার একটা ছোট্ট সার্জারির ডেট দেন রেহনুমা ম্যাডাম। আমার তখন আধা পাগল অবস্থা। বাসার কাউকে সার্জারির কথা না জানিয়ে আমি একাই চলে এসেছিলাম হাসপাতালে। হাসপাতালে এসে শুনি আমাকে এডমিট হতে হবে এবং পুরো অপারেশনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করলেন তারা। আমাকে জানালেন এনেস্থিসিয়া দিয়ে অপারেশন শেষ হওয়ার পর আমাকে সারাদিন পোস্ট অপারেটিভ এ থাকতে হবে, রাতে বাসায় যেতে দিবেন। রেহনুমা ম্যাডাম কে এসে আমি জানালাম যে, আমার সাথে কেউ আসে নি, সবাই ব্যস্ত ছিলো তাই আমার জন্য কাউকে বিরক্ত করতে চাই নি। ম্যাডাম আমাকে দেখে কি বুঝলেন জানি না, সুন্দর করে হেসে বললেন অসুবিধা নেই, আমরা তো আছি, কোন ভয় নাই। এরপর আমার ব্যাগ রাখার ব্যবস্থা করে দিলেন উনার এসিস্টেন্ট ডাক্তার পারিজা আপুর কাছে। সেদিন আমার একটু ও ভয় লাগে নাই, একবার ও মনে হয় নাই সাথে কেউ নেই। কারণ আমি জানতাম রেহনুমা ম্যাডাম আছেন। উনি যাই হোক আমাকে খেয়াল করবেন।
ঘটনা ২:
প্রথমবার আই ভি এফ ব্যর্থ হওয়ার পর ২য় বার আমি ইন্ডিয়া তে আই ভি এফ করার সিদ্ধান্ত নিই। সেটার প্রস্তুতির জন্য ইন্ডিয়ার ডাক্তার দের আমার কিছু টেস্ট রিপোর্ট আর আগের বারের আই ভি এফ এর ডিটেইল দরকার ছিলো। রেহনুমা ম্যাডাম কে সে কথা জানানোর সাথে সাথে ম্যাডাম সমস্ত ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন অতি অল্প সময়ের মধ্যে। আমার ইন্ডিয়ার ডাক্তারের মেইলের রিপ্লাই ও দিয়েছিলেন তিনি।
আমি উনার এতখানি সহযোগীতাপূর্ণ আচরণ দেখে মুগ্ধ হয়েছি, বারবার বিস্মিত হয়েছি!! উনি এসব কাজের কোন টাকা পয়সা ও নেন নি। বরং উনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাকে কৃতজ্ঞ করেছেন।
তাই তাকে নিয়ে রোগীর পেট থেকে মৃত শিশু বের করেছেন, মৃত শিশুকে আই সি ইউ তে রেখেছেন টাকার জন্য এই অভিযোগ সারা পৃথিবীর মানুষ এসে করলে ও আমার পক্ষে বিশ্বাস করা সম্ভব নয় কখনো। রেহনুমা ম্যাডামের বেশিরভাগ পেশেন্ট ই এ ব্যপারে আমার সাথে একমত পোষণ করবেন বলেই আমার ধারণা।
ঘটনা: ৩
ইন্ডিয়াতে আই ভি এফ সাকসেসফুল হয় সেবার। কিন্তু বিটা এইস সি নামক একটা হরমোন কম থাকায় ইন্ডিয়ার ডাক্তার আমাকে জানান যে আমার মিসক্যারেজ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। দেশে ফেরত এসে আনন্দের সাথে খুব চিন্তিত ও ছিলাম। রেহনুমা ম্যাডামের তত্বাবধানে শুরু হলো এরপর আমার অপেক্ষার পালা। সেসময়টা তে রেহনুমা ম্যাডাম আমাকে যেভাবে আগলে রেখেছিলেন, আমি তা কোনদিন ভুলতে পারবো না। আমার ফোন নম্বর উনি তার আগেই সেভ করে রেখেছিলেন। ফোন ধরেই বলতেন, সায়মা কি হয়েছে বলেন। এই কথা শোনার সাথে সাথেই আমার ভয় কমে যেতো। সেবার এক সপ্তাহ পর পর ব্লাড টেস্ট করতে হতো বিটা বেড়েছে কিনা জানতে। প্রতি সপ্তাহেই রেহনুমা ম্যাডাম কাউন্সিলিং করতেন আমার পজিটিভ চিন্তা এবং সব রকম পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত হওয়ার জন্য। সেবার আমি টুইন কন্সিভ করেছিলাম। টেনশন করার পাশাপাশি বেশ খুশি ও ছিলাম। বিটা রিপোর্ট খারাপ আসতে থাকলে ইন্ডিয়ার ডাক্তার জানালেন, আমার খুব অল্প দিনের মধ্যেই মিসক্যারেজ হয়ে যাবে তাই আর অহেতুক অপেক্ষা না করে ডি এন্ড সি করে ফেলতে। আমি সেই মেইল টা সহ্য ই করতে পারছিলাম না। মেইল পাওয়ার পর রেহনুমা ম্যাডাম কে বলেছিলাম, আমি শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চাই, একটা মিরাকল যদি হয়!! ম্যাডাম আমাকে অপেক্ষা করতে দিয়েছিলেন। শেষ যেদিন আল্ট্রা সাউন্ড এর রিপোর্ট আসলো বাচ্চাদের হার্টবিট পাওয়া যাচ্ছে না, ম্যাডাম নিজেই প্রচণ্ড মন খারাপ নিয়ে আমাকে ওষূধের মাধ্যমে মিসক্যারেজের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা বোঝাতে থাকলেন। আমি চুপ করে একটু ও না কেঁদে শুনেছিলাম। শুধু বাসায় এসে মিশনে কর্মরত আমার হাসবেন্ড কে কল করে বলেছিলাম, আমি কিছুতেই ওষুধ খাবো না। আমার বাচ্চা দুইটা থাকুক এভাবেই। তিন চারদিন পর্যন্ত আমি সত্যি ওষুধ খাই নি।এরপর ম্যাডাম নিজে থেকে ফোন করে খবর নিয়ে যখন শুনলেন যে আমি ওষুধ তখনো খাই নি, তিনি আমাকে অনেক মমতা নিয়েে আবারো বুঝিয়ে বললেন ধৈর্য ধরতে আর অবশ্যই ওষুধ খেতে। উনার কথা শুনে আমি ওষুধ খাই। সেদিন রাতেই ভয়ংকর ব্লিডিং শুরু হয়। আমি পাগলের মতো চিৎকার করে মনে হয় কেদেছিলাম। পুরো রাত কিভাবে কেটেছিলো আমার এখন আর সত্যি মনে নেই। পড়ে আম্মুর কাছে শুনেছিলাম আম্মু ঘাবড়ে গিয়ে রাত প্রায় ২:৩০ টার দিকে আমার নম্বর থেকে রেহনুমা ম্যাডামকে কল করেছিলেন। ম্যাডাম কে কল করার সাথে সাথে আম্মুুর মনে হয়েছিলো এই কল টার জন্য যেন ম্যাডাম অপেক্ষা করছিলেন। এক দুইবার রিং হওয়ার সাথে সাথেই তিনি রেসপন্স করেছিলেন সেরাতে। আম্মু কে ফোনে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে, একটু শান্ত হলে আমাকেে চেকআপে নিয়ে যেতে বলেছিলেন। একদিন পর চেকাপের দিন উনার এপোয়েন্টমেন্ট না পাওয়ায় উনাকে কল করতেই ম্যাডাম appointment ছাড়াই চলে আসতে বলেন। এখানে উল্লেখ্য স্কয়ার হাসপাতালে এপোয়েন্টমেন্ট ছাড়া গেলে পেমেন্ট দেয়া যেত না সেসময়। আমার মনে আছে আম্মু ম্যাডামের ভিসিটিং ফি কাউন্টারে দিতে পারছিলেন না বলায়, ম্যাডাম আমার সামনেই আম্মু কে বললেন ফিস লাগবে না। এখানে আবারো উল্যেখ করছি আমি ম্যাডামের আত্মীয় বন্ধু কিছুই নই। শুধুই একজন সাধারণ পেশেন্ট। আমি আর আম্মু দুজনেই খুব মুগ্ধ হয়েছিলাম উনার দায়িত্ববোধ আর মানবিকতা দেখে।
রেহনুমা ম্যাডামের চেম্বারে এই নিয়ম এখনো বহাল রয়েছে। পেশেন্টের দরকার থাকলে ম্যাডাম কোন সিস্টেমেটিক appointment এর ধার ধারেন না। তাই স্কয়ার হাসপাতাল ও উনার appointment না নিয়ে আসা জরুরি পেশেন্ট দের পেমেন্ট নেয়ার আলাদা সিস্টেম করেছেন।
ঘটনা –৪:
আমার মিসক্যারেজ এর ৪ মাস পর হঠাত করেই কোন চিকিৎসা ছাড়াই আমি naturally কন্সিভ করি। যেই মিরাকলের জন্য আমি অনেক দিন অপেক্ষা করছিলাম সেটা যে এত তাড়াতাড়ি হবে আমি কল্পনা ও করতে পারি নি। আমি তখন চট্টগ্রামে। চার মাস আগের অভিজ্ঞতা মনে পড়ে খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। ইন্ডিয়ার ডাক্তার এবং ঢাকাতে রেহনুমা ম্যাডাম দুজন ই বললেন ৫ মাসের আগে যেন আমি কোনরকমের জার্নি না করি। কিছু এক্সট্রা মেডিসিন দিয়েছিলেন রেহনুমা ম্যাডাম। ইন্ডিয়ার ডাক্তার আরো কিছু মেডিসিন বাড়িয়ে দিলেন তিন মাসের জন্য। রেহনুমা ম্যাডামকে সেটা জানানোর সাথে সাথেই কোনরকম ইগো প্রব্লেম না দেখিয়ে বলেছিলেন সেই এক্সট্রা ওষুধগুলো ও আমি চাইলে খেতে পারি অসুবিধা নাই। এরপর দীর্ঘ ৬ মাস রেহনুমা ম্যাডাম ফোনে আমার ফলোআপ করেছিলেন। কখন কি খেতে হবে, কি ওষুধ বাড়াতে হবে কমাতে হবে, কোন টেস্ট করতে হবে সব কিছু উনি ফোনে বলে দিতেন। টেস্টের রিপোর্ট আমি ছবি তুলে ভাইবারে পাঠাতাম। আমার এত অপেক্ষার প্রেগন্যান্সি ছিলো, ম্যাডাম ঠিক সেভাবেই যত্ন নিয়েছেন পুরোটা সময়। প্রেগন্যান্সির পুরোটা সময় ছোট খাটো প্রতি টা জিনিস নিয়ে ভয় পেয়ে রেহনুমা ম্যাডাম কে ফোন করে জ্বালাতন করতাম। ম্যাডাম সবসময় ফোন ধরে হাসি মুখে আমার বিচিত্র প্রশ্নের উত্তর দিতেন, আমাকে সাহস দিতেন। কখনো ব্যস্ততায় ফোন ধরতে না পারলে অবশ্যই কল ব্যাক করতেন। উনা কে এভাবে পাশে না পেলে সেই ভয়াবহ মিসক্যারেজ এর ফোবিয়াকে একপাশে সরিয়ে রেখে প্রেগন্যান্সির এই জার্নি টা আমার সহজ হতো না সে ব্যপারে আমি নিশ্চিত।
এমন স্নেহশীল, মমতাময়ী একজন মানুষ কোন পেশেন্টের ক্ষতি করবেন এটা বিশ্বাসের অযোগ্য ব্যপার। এই প্রসংগে আর একটা কথা উল্লেখ করতে চাই তা হলো স্কয়ারের গাইনি ওয়ার্ডের নার্স রা প্রচণ্ড ট্রেইন্ড এবং well behaved। এবং অতি অবশ্যই স্কয়ার হাস্পাতালের গাইনী ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের অন্যতম সেরা গাইনী ডিপার্টমেন্ট। এখানে সন্তান হওয়ার দিন থেকে শুরু করে যে কয়দিন থাকতে হয় সে কদিন নতুন বাবা মা বা আত্মীয় স্বজনের কোন কিছু নিয়েই চিন্তা করতে হয় না। বাচ্চার পরনের নিমা থেকে শুরু করে রোগীর সমস্ত কিছু হাস্পাতাল থেকেই সরবরাহ করা হয়। আমি সহ আমার চেনা জানা যত মানুষের স্কয়ারে বাচ্চা হয়েছে সবাই এদের সার্ভিসে ১০০ ভাগ সন্তুষ্ট। দুই একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা থাকতে পারে। সেজন্য কর্তৃপক্ষের থেকে পেশেন্টের বোঝার ভুলই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখেছি।
আর রেহনুমা ম্যাডামের পেশেন্ট দের মধ্যে তদন্ত করে দেখলে দেখা যাবে আমি যা বলেছি সিংহভাগ ই তার সাথে একমত পোষণ করবেন। উনার মত উন্নত মনের, মনুষত্যবোধ সম্পন্ন ডাক্তার বাংলাদেশে বিরল। উনার সুমিষ্ট ব্যবহার এবং সব কিছুর উর্ধে রোগী এমন মনোভাবের কারণে গত চার বছরে উনার রোগীর সংখ্যা বেড়েছে চার গুণ। সেজন্যই উনি এমন অপপ্রচারের স্বীকার কিনা কে জানে!!
তাকে না জেনে, ঘটনার সত্যতা যাচাই না করে যারা রেহনুমা ম্যাডাম কে নিয়ে নোংরা মন্তব্য করছেন তাদের প্রতি তীব্র ধিক্কার জানাই। রোগীর পরিবারের কম্পলেইন একটু মনোযোগ দিয়ে শুনলেই বুঝতে পারবেন কথার মধ্যে অনেক ফাক রয়েছে। উনাদের পেশেন্টের প্রসব বেদনার সময় বলা কথা কে ও উনারা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করেছেন, যা রীতিমতো অদ্ভুত কথা। একটা মেয়ে প্রসব যন্ত্রণার সময় গালিগালাজ করা থেকে শুরু করে অনেক কিছু বলে যা আমলে নেয়ার মতোই ব্যপার নয়। উনারা বলেছেন নবজাতকের মাথায় নাকি আঘাতের চিনহ ছিলো। আমি সে জায়গাতে ব্যপার টা বুঝলাম না, উনারা কি বলতে চান রেহনুমা ম্যাডাম বাচ্চার মাথায় আঘাত করেছেন নাকি পেট থেকে বের করার সময় মাটিতে ফেলে দিয়েছেন। এমন ভয়ংকর ধরনের কথা আমার লিখতে ও খুব বাজে লাগছে। কিন্তু অভিযোগের ধরনে না লিখে পারলাম না।
মায়ের কোলে সন্তানের মৃত দেহ দেখা একটা ভয়ংকর কষ্টের ব্যপার। কারো পক্ষেই সে দৃশ্য দেখে চোখের পানি লুকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। তাই সেই কষ্টের ভিডিও কে পুঁজি করে একজন সম্মানী, ভাল মানুষ ডাক্তার কে বদনাম করা খুব নিম্নমানের কাজ। আশা করি শিশুটির বাবা মা সহ আত্মীয় স্বজনেরা শোক টা সামলে উঠে একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলে উনাদের অভিযোগের গরমিল টা ধরতে পারবেন।
Rehnuma Jahan ম্যাডাম, আপনি প্লিজ মানুষের এমন রুপ দেখে কিংবা সস্তা কিছু লোকের ফেসবুক কমেন্ট দেখে অভিমান করে বদলে যাবেন না। আমরা যারা আপনার পেশেন্ট এমন মিথ্যা অপপ্রচার কখনো বিশ্বাস করি না। আমি দেখেছি আপনি বিকেল ৫–৬টা বাজার আগে একটু লাঞ্চ করার ও সময় পান না। তার প্রতিদান এমন আজেবাজে কথা কখনো ই হতে পারে না। সত্যি সামনে আসবে অবশ্যই। বাংলাদেশের তথাকথিত শিক্ষিত পেশেন্ট দের ডাক্তার হওয়া আসলেই খুব কঠিন ব্যপার। তাই সাহস আর ধৈর্য হারাবেন না। We all love You a lot Madam. You are such a sweet heart.
Saima manjura